বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৪ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হরকাতুল জিহাদের সদস্য ইকবাল হোসেন ওরফে ইকবাল ওরফে জাহাঙ্গীর ওরফে সেলিমকে অবশেষে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর র্যাব বলেছে, হামলার সময় ইকবাল সভামঞ্চে গ্রেনেড ছুড়েছিলেন। এরপর গত ১৭ বছর দেশে-বিদেশে পালিয়ে ছিলেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার ভোরের দিকে রাজধানীর দিয়াবাড়ী থেকে ইকবালকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী।
সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব মহাপরিচালক বলেন, ইকবালকে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ এখনো পাননি তাঁরা। তবে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইকবাল ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড ছোড়ার কথা স্বীকার করেছেন।
আমাদের ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, ইকবাল ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ঘোড়ামারা গ্রামের আবদুল মজিদের ছেলে। ওই গ্রামের বাসিন্দা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার আজম হোসেন বলেন, ইকবাল ঝিনাইদহের কেসি কলেজে পড়ার সময় ছাত্রদলের ক্যাডার ছিলেন।
উচ্চ মাধ্যমিক পাস ইকবাল স্কুল ও কলেজে পড়ার সময় ছাত্রদলের রাজনীতিতে জড়িত থাকার বিষয়টি র্যাবের সংবাদ সম্মেলনেও জানানো হয়। ইকবাল ঝিনাইদহে কেসি কলেজ ছাত্রসংসদে ছাত্রদলের নির্বাচিত শ্রেণি প্রতিনিধি ছিলেন। এরপর মালয়েশিয়ায় যান। সেখান থেকে দেশে এসে আইএসডি ফোন ও অন্যান্য ব্যবসা শুরু করেন। একসময় তিনি সর্বহারা ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে কোন্দলে জড়িয়ে পড়েন।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, মূলত ২০০১ সালে ইকবালের চিন্তা-চেতনা ও মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন আসে। এরপর ঝিনাইদহের স্থানীয় এক জঙ্গি সদস্যের মাধ্যমে হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশে (হুজিবি) যোগ দেন তিনি। ২০০৩ সালে মুফতি হান্নান ও অন্যান্য শীর্ষ নেতার সান্নিধ্যে আসেন। এরপর তিনি জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিতে থাকেন। ২০০৪ সালের আগস্ট মাসে মুফতি হান্নানের নির্দেশে ঢাকায় হুজিবির গোপন আস্তানায় চলে আসেন ইকবাল। তিনি মুফতি হান্নানের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে জঙ্গিদের গোপন বৈঠকে অংশগ্রহণ করতেন।
হামলার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে ইকবাল র্যাবকে জানান, মুফতি হান্নানের নির্দেশে তিনি হামলায় অংশ নেন। হামলা পরিচালনার জন্য তাঁকে মুফতি হান্নান গ্রেনেড সরবরাহ করেছিলেন। হামলার সময় মঞ্চ লক্ষ্য করে তিনি গ্রেনেড ছুড়েছিলেন। হামলার পর তিনি ঝিনাইদহের বাড়িতে কয়েক মাস অবস্থান করেন। এরপর গাজীপুর ও সাভারে পালিয়ে ছিলেন। দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর ২০০৮ সালে মালয়েশিয়া যান ইকবাল। এরপর গত বছরের শেষ দিকে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে শনাক্ত হলে মালয়েশিয়া সরকার তাঁকে ঢাকায় ফেরত পাঠায়। দেশে এসে আবার সমমনাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন।
র্যাবের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এরই মধ্যে ইকবালের সম্পর্কে তথ্য পেয়ে অনুসন্ধানে নামেন গোয়েন্দারা। এরপর জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা ও র্যাবের যৌথ প্রচেষ্টায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে র্যাব মহাপরিচালক বলেন, ২০০৮ সালে ম্যানুয়াল পাসপোর্ট ছিল। সে সময় জঙ্গি ইকবাল নাম পরিবর্তন করে দেশত্যাগ করেন।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি ঘৃণিত, কলঙ্কজনক ও বিভীষিকাময় একটি দিন। সেদিন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ঘৃণ্যভাবে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। শাহাদাতবরণ করেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী আইভি রহমানসহ দলটির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী।
২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর গ্রেনেড হামলা মামলার রায় হয়। ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল রায়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে ইকবালও রয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয় আরো ১১ আসামিকে। দণ্ডিত ৩৩ আসামি কারাগারে থাকলেও পলাতক ছিলেন ১৬ জন। ইকবাল গ্রেপ্তার হওয়ায় এখন পলাতক রইলেন ১৫ জন। নিষিদ্ধ সংগঠন হরকাতুল জিহাদের শীর্ষ নেতা মুফতি হান্নানের অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় এই মামলায় তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
Leave a Reply